বর্ণনামূলক গবেষণা কাকে বলে? এর সুবিধা ও অসুবিধা
বর্ণনামূলক গবেষণা কাকে বলে? সামাজিক সমস্যা সমাধানে বর্ণনামূলক গবেষণা কীভাবে কাজ করে?
বর্ণনামূলক গবেষণা (Descriptive Research):
সমাজবিজ্ঞান তথা শিক্ষা গবেষণার একটি বহুল প্রচলিত ও জনপিয় গবেষণা পদ্ধতি হচ্ছে বর্ণনামূলক গবেষণা। এতে বর্তমান কালের সংঘটিত ঘটনাবলির বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। বর্তমানের চালু বিশ্বাস, ঘটনা, সমস্যা, প্রবণতা, প্রতিক্রিয়া, দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে বর্ণনামূলক গবেষণা করা হয়ে থাকে। বর্ণনামূলক গবেষণাকে অনেকে জরীপ গবেষণাও বলে থাকেন। চলমান ঘটনাপুঞ্জের সঠিক বর্ণনাই বর্ণনামূলক গবেষণার লক্ষ্য। এ পদ্ধতি প্রয়োগে বহু মূল্যবান বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বা সূত্র আবিষ্কৃত হয়েছে।
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে- ‘Descriptive research is used to describe characteristics of a popular or phenomenon being studied. It does not answer questions about how/what/why the characteristics occurred.’
ইউনেস্কোর মতে- ‘Descriptive research provides information about conditions, situations, and events that occur in the present situation.’
বর্ণনামূলক গবেষণা পদ্ধতির বিবেচ্য দিক:
- গবেষণার বিষয়টি বর্ণনাযোগ্য হতে হবে;
- তথ্য সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য হতে হবে;
- বিষয়টি সম্পর্কে পূর্ণ ও সঠিক চিত্র যাতে পাওয়া যায় বর্ণনা সেরূপ বিস্তারিত হতে হবে।
বর্ণনামূলক গবেষণার সুবিধা:
- বর্তমানে সংঘটিত ঘটনাবলির উপর এ গবেষণা পরিচালিত হয়। এতে সমস্যার কারণ ও সমস্যা সমাধান করা যায় ফলে প্রশাসন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়।
- ভবিষ্যতের কর্মপন্থা ও পরিকল্পনা প্রণয়নে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
- দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।
- বাস্তব, সঠিক ও যথার্থ ঘটনা উৎঘাটন করা
- গবেষকের নিজস্ব মতামত ও সুপারিশ প্রদান করে থাকেন। ফলে প্রশাসনিক উন্নয়নে এটা কার্যকর।
- তথ্য সংগ্রহ ও উপকরণ তৈরি সহজ।
- সময়, শ্রম ও অর্থ খরচ কম হয়।
বর্ণনামূলক গবেষণার অসুবিধা:
- আশাতীত ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে।
- গবেষকের নিজস্ব মতামত ও সুপারিশ প্রদানের সুযোগ থাকায় নিরপেক্ষতার অভাব থাকতে পারে।
- উত্তরদাতা অনেক সময় সঠিক তথ্য না দিয়ে ভুল তথ্য দেওয়ার ফলে ফলাফল ভুল পাওয়া যায়।
- নমুনাদল অনেক সময় সঠিক প্রতিনিধিত্বকারী না হলে সঠিক ফলাফল পাওয়া নাও যেতে পারে।
- অনেক সময় গবেষক তাঁর নিজস্ব মতামত ও সুপারিশ প্রদান করেন। এতে নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতার অভাব পরিলক্ষিত হয়।
সামাজিক উন্নয়নে বর্ণনামূলক গবেষণা যেভাবে কাজ করে:
সামাজিক উন্নয়নে বর্ণনামূলক গবেষণার ভূমিকা অপরিসীম। কারণ এ গবেষণার মাধ্যমে সমাজ নানা ধরণের উন্নয়ন সম্ভব হয়। সমাজের চাহিদা অনুসন্ধান ও নিরূপণের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পায় বর্ণনামূলক গবেষণার মাধ্যমে। একটি সমাজের বর্ণনামূলক অনুসন্ধান পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা, মৃত্তিকাবিজ্ঞান প্রভৃতি প্রকৃতি বিজ্ঞানে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। শিক্ষার এ সমস্ত শাখা ছাড়াও খোদ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়েও বর্ণনামূলক গবেষণা পদ্ধতির ব্যবহার ব্যাপক। কোন দল বা গোত্রের বৈশিষ্ট্যাবলীর সুষ্ঠু বর্ণনা লাভের জন্য এই প্রকার অনুসন্ধানমূলক গবেষণা পরিচালিত হয়। শিক্ষার সমস্যা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভের জন্য ব্যবহৃত সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিই হলো বর্ণনামূলক গবেষণা পদ্ধতি।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সমস্যার পরিমাণ বেশী থাকে এবং তা জটিল প্রকৃতি। এ সমস্ত সমস্যা দূরীকরণ বা সমাধানের জন্য সর্বপ্রথমেই প্রয়োজন সমস্যার প্রকৃতি, কারণ, প্রভাব ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা। বর্ণনামূলক গবেষণা পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা এসব সমস্যার প্রকৃতি এবং কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি। উন্নয়নশীল দেশে শুধু সমস্যা জানাই একমাত্র বিষয় নয়। শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সমাজের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সমাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
সমাজের মানুষের আচার-আচরণ, জীবন যাত্রা প্রণালী, ধর্ম, সংস্কৃতি, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, মূল্যবোধ ইত্যাদি যে কোন উন্নয়ন তৎতপরতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। যেকোন উন্নয়ন তৎপরতায় জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা থাকা অপরিহার্য, অন্যথায় উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। তাই যে কোন উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রথমেই প্রয়োজন যে বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে সেই বিষয় বা ক্ষেত্রটি সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা থাকা ।
এজন্য যে বিষয়ে বা ক্ষেত্রে উন্নয়ন কর্মসূচী পরিকল্পিত হবে সে বিষয়ে সামাজিক জরিপের মাধ্যম তথ্য সংগ্রহ করে সে বিষয় বা ক্ষেত্রের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সঠিক চিত্র লাভ করা আবশ্যক। আর এই ফলাফলে ভিত্তিতে কর্মসূচী পরিকল্পিত হবে। এ প্রকারে কর্মসূচীতে জনগণের সহযোগিতা অধিক পাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই শিক্ষা উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রয়েনের পূর্ব শর্ত হলো জরীপ বা অনুসন্ধানের মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করে সমাজের প্রকৃত অবস্থা ও চাহিদা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া। এসব ক্ষেত্রে বর্ণনামূলক গবেষণা পদ্ধতি অধিকতর উপযোগী। এ গবেষণার জন্য ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন চলকের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। তাই বর্ণনামূলক গবেষণা পদ্ধতির মূল লক্ষ্য কোন সমস্যার বিস্তারিত ও সঠিক বিবরণ প্রদান হলেও ইহা তথ্যের ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য বিশ্লেষণও করে থাকে। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায় সমাজ উন্নয়নে বর্ণনামূলক গবেষণার কার্যকারিতা রয়েছে।
মতামত দিন